কৃষি বাজেট সমাচার 

  • রাবেয়া আহমেদ স্বর্ণা 
  • সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮

জাতীয় বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।এখানে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালা ও পরিকল্পনার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। কয়েক দশকে আমাদের অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটেছে। জিডিপি’তে কৃষি খাতে অবদান কমেছে,শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কোন না কোন ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল।শ্রমশক্তি জরিপ (২০১০) এর হিসাব মতে,দেশের মোট শ্রমমক্তির ৪৭.৫ শতাংশ এখনো কৃষিতে নিয়োজিত আছে।

লাল-সবুজের বাংলাদেশ শুধু এগিয়ে চলছে না,কৃষিতে অতি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।এর আগে দেশের খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো।এ আমদানিকারক দেশ এখন খাদ্যে পরিপূর্ণ দেশ।এর পেছনের নায়ক হচ্ছে এ দেশের কৃষি ও কৃষক। তাই কৃষিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে ভাবা যায় না। 

অথচ চার বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমছে।এ বরাদ্দ হ্রাস পাচ্ছে মোট বাজেটের শতাংশ হিসাবেও।ফলে বাজেটে কৃষি খাত অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে।আপাতদৃষ্টিতে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা না গেলেও আগামীতে কৃষিতেই শুধু নয়,সামগ্রিক অর্থনীতিসহ জনজীবন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।দেশের প্রধান এ উন্নয়ন খাতে বাজেটে কেন বিমাতাসুলভ বৈষম্য করা হয়েছে,তা বোধগম্য নয়।

জাতীয় বাজেটে কৃষি খাত অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২,৫০,৫০৬ কোটি টাকা যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে ৫.৩৪ শতাংশ বেশি।এসময় কৃষিখাতে সরকারের মোট ব্যয় বরাদ্দ ১২,৩৯০ কোটি টাকা।এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১৫২৪ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন ব্যয় ১০,৮৬৬ কোটি টাকা।এই বরাদ্দের পরিমান পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে (১১১ কোটি টাকা) বেশি হলেও বাজেটের মোট আকারে কৃষির অংশীদারিত্ব হ্রাস পেয়েছে ০.৭৩ শতাংশ।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী তার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “কৃষি গবেষণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে”।কিন্তু মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের জন্য যেখানে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ১১৩.৮৪১২ কোটি টাকা, সেখানে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ আরো হ্রাস পেয়ে দাড়ায় ৯২.৭২০২ কোটি টাকায়।২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৫৫.১৪৬০, ১৫.১০৩৭ ও ১৫.৪৮ কোটি টাকা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি অনেক দিন ধরে ৬ এর উপরও থাকলেও ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষির প্রবৃদ্ধি ছিলো ৫.২৪ শতাংশ।২০১০-১১, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে দাড়ায় যথাক্রমে ৫.১৩, ৩.১১ ও ২.১৭ শতাংশে।

৫জুন ২০১৭,দৈনিক ইত্তেফাক এর একটি নিউজ থেকে জানা যায়,২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ১৩ হাজার ৬০৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন খাতে ১১ হাজার ৮শ ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে এই বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৩শ ৭৮ কোটি টাকা।২০১০-১১ থেকে ২০১৬-১৭ সাল নাগাদ মোট বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।পক্ষান্তরে, সার্বিক কৃষি খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৯৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। শস্য খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল কম।উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন উভয় খাতেই তা দৃশ্যমান। প্রবৃদ্ধি কমে সর্বশেষ ১ দশমিক ২৮ শতাংশতে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে কৃষির উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি,কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকদের ক্ষতির বড় কারণ। ফলে কৃষি কাজে উত্সাহ হারাচ্ছে কৃষক।তাদের এইসব সমস্যার সমাধান খুব তাড়াতাড়ি করা না হলে দেশের কৃষির উন্নয়নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

কিন্তু আশার বিষয় হচ্ছে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কৃষি বাজেট বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।যার মধ্যে কৃষি গবেষনা,উন্নত মানের বীজ উৎপাদন,বিতরন,প্রক্রিয়াজাতকরন,সংরক্ষন,ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প ও কর্মসূচি,জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় উন্নত মানের ফসলের বীজ উৎপাদন ও বিতরন,নির্ধারিত মূল্যে সার প্রদান,দুস্থ কৃষকদের তালিকা প্রদান এবং তাদের যথাযত সাহায্য প্রদান সহ আরো অনেক কর্মসূচী।নেয়া হয়েছে কৃষির ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য বাজারজাতকরণ কর্মসূচিও।এই কর্মসূচী যদি সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হয় তবে দেশের কৃষিসমাজ অনেকাংশে এগিয়ে যাবে।

যেহেতু বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ তাই দেশের উন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে কৃষিখাতের উপর।তাই এদেশের বাজেটে প্রাধান্য দিতে হবে কৃষি খাতকে।দেশের মানুষের দারিদ্র্য মোচন,কর্মসংস্থান বৃদ্ধি,খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট সবসময়ই আমাদের কাম্য।বর্তমান বাজেটের আকার বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি কৃষি বাজেট।আসলে প্রশ্নটা বাজেটের আকার নিয়ে যতটা না,তার থেকে বেশি হওয়া উচিত তার গতি-প্রকৃতি নিয়ে।শুধু বরাদ্দের দিকে নয়,নজর দেওয়া দরকার তার গুণগত মানের দিকে।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।

Leave a Comment